সাতক্ষীরায় ফলন বাড়াতে সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের মাধ্যমে বোরো ধানের আবাদ শুরু

প্রকাশিত: ৫:৫১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২ | আপডেট: ৫:৫১:অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২
ছবিটি সাতক্ষীরা সদরের বলাডাঙ্গা থেকে তোলা।

সাতক্ষীরায় ফলন বাড়াতে সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের মাধ্যমে বোরো ধানের আবাদ শুরু হয়েছে। সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের মাধবকাটি বলাডাঙা বিলে সম্প্রতি এ আবাদ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এর আগে ভালো মানের চারা উৎপাদনের জন্য উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্রে-তে বীজ বপন করছিলেন কৃষকরা। নতুন এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানালেন জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

সাতক্ষীরা খামার বাড়ি সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হচ্ছে। এরমধ্যে সদর উপজেলার ধুলিহর ও ঝাউডাঙা, কলারোয়া উপজেলার পৌর ও কেরালকাতা, দেবহাটা উপজেলার সদর ও তালা উপজেলা সদরের ৩০০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে ট্রেতে বীজ বপন ও মেশিনে পাতা রোপনের মাধ্যমে হাইব্রীড তেঁজগোল্ড জাতের বোরো ধানের চাষাবাদ হচ্ছে। আউশ, আমন ও বোরো এই তিন মৌসুমে এ চাষ হয়ে থাকে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, জনসংখা বৃদ্ধির সাথে সাথে কমছে কৃষি জমি। তাই স্বল্প জমিতে অধিক ধান উৎপাদন করে মানুষের খাদ্য চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সাতক্ষীরায় উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষাবাদ শুরু হয়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সমালয় পদ্ধতিতে সদর উপজেলার মাধবকটির বলাডাঙায় ৫০ একর জমিতে হাইব্রীড তেঁজগোল্ড বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। রোপন পদ্ধতি দেখে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়েছে।

তারা আরও জানান,সরকারি কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের মাধবকাটি বলাডাঙা গ্রামে স্থানীয় ৫৫ জন কৃষক মাটিভর্তি ট্রে-তে বপন করছে তেঁজগোল্ড হাইব্রিড জাতের ধানবীজ। সমলয় চাষাবাদের নতুন মাত্রায় মেশিন দিয়ে ৫০ একর জমিতে রোবো ধানের চারা রোপন করা হয়। এবার জেলার চারটি উপজেলায় ৩০০ একর জমিতে এ জাতের ধান রোপন করা হচ্ছে। ট্রে-তে বীজ বপনের ১৪০ থেকে ১৪৫ দিনের মধ্যে ধান কেটে ঘরে তোলা যায়। বিঘা প্রতি ২০ বস্তা বা ৩০ মণ ধান উৎপাদন হবে। একইভাবে এ চাষে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনতে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার কৃষকদের ৭০ শতাংশ ও অন্যান্য উপজেলা গুলিতে ৫০ শতাংশ সরকারি অনুদান দেওয়া হবে।

কৃষির সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উচ্চ ফলনশীল একই জাত ব্যবহার, ট্রে-তে বীজ বপন, কম বয়সের চারা রোপন, চারা রোপনে রাইচ ট্রন্সপ্লান্টার ব্যবহার, সুষম সার ব্যবহার, আইল ফসল, ধান কর্তনে কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো, উৎপাদন খরচ সাশ্রয় করা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ভরা মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের সংকটের সমাধান সম্ভব হবে এই সমলয় চাষাবাদে। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাইচ ট্রন্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ৪৫ থেকে ৬০ মিনিটে এক বিঘা জমিতে চারা রোপন করা যাবে। এ বিষয়ে কৃষকদের কারিগরি সুবিধা ও সার্বক্ষনিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

গত বছর তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের মাহমুদকাটিতে তেঁজগোল্ড হাইব্রীড জাতের ধান চাষ করা হয়। কৃষি বিভাগের মাধ্যমে এ খবর পেয়ে ওই এলাকার কৃষকদের সাথে তিনি কথা বলেছেন। তেঁজগোল্ড হাইব্রীড বোরো ধান ট্রে-তে বীজতলা তৈরি করা হয়। এ ছাড়া মেশিনের মাধ্যমে রোপন করা হয় ধান গাছ। শ্রমিক, মজুরি ও সময় কম লাগায় এ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি দেড় বিঘা জমিতে এবার এ জাতের ধান লাগিয়েছেন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা কর্মসুচির আওতায় এবার ৫০ একর হাইব্রীড জাতের বোরো ধান রোপন করা হচ্ছে। ৪ হাজার ৫০০ ট্রে-তে হাইব্রীড ধানের বীজতলা লাগানো হযেছে। সার ও কীটনাশকসহ কর্তণ সরকারি উদ্যোগে করা হবে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা তুজ জোহরা জানান, মৌসুমী প্রণোদনার রাইস ট্রান্সপ্লান্টের আওতায় ১৫০ বিঘা জমিতে সমালয় পদ্ধতিতে হাইব্রীড বোরো ধানের চাষ হচ্ছে। খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হবে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, এবার সাতক্ষীরা জেলায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরা ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চারটি উপজেলার ৬টি স্থানে ৩০০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে হাইব্রীড ধান চাষ করা হচ্ছে। চাষীদের অর্থের অপচয় কম ও সময় সাশ্রয়। রাইস প্লান্টার এর মাধ্যমে বপন, রোপন, কর্তন ও কর্ষণ সবগুলো হচ্ছে যান্ত্রিকভাবে।

তিনি আরও জানান, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ১০০ ভাগ কর্ষণ ও ১২ ভাগ কর্তণ হলেও রোপন ২ শতাংশ হচ্ছে। কম্বাইন হারভেস্টারের জন্য যন্ত্রপাতি কিনতে সরকার অনুদান দিচ্ছে।

 

এসজি/ডেক্স


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক। ডেক্স