চুকনগরে কুলবাড়ি নদীর বাঁধ ভেঙ্গে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ইরি ধান নষ্ট: কৃষকের মাথায় হাত প্রকাশিত: ৫:২৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১২, ২০২০ | আপডেট: ৫:২৭:অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১২, ২০২০ গাজী আব্দুল ক্দ্দুুস, চুকনগর(খুলনা): চুকনগরে কুলবাড়িয়ার স্লুইচ গেটের সামনে থেকে নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে কয়েক হাজার হেক্টর ইরি ধানের জমিতে নোনা পানি উঠে গেছে। ফলে এই ধান কাটার মৌসুমে ইরি ধানের জমিতে নোনা পানি উঠায় কয়েক কোটি টাকার ধান নষ্ট হওয়া উপক্রম প্রায়। শত শত মৎস্য ঘেরে নোনা পানি প্রবেশ করায় ঘের গুলোর সাদা মাছও মরে যাওয়ার আশংঙ্কা দেখা দিয়েছে। হাজার হাজার কৃষকের মাথায় হাত উঠে গেছে। অনেকে চোখের পানিতে দিনাতিপাত করছে। ধান কাটার মৌসুমে এসে ইরি ধানের জমিতে পানি উঠে যাওয়ায় তাদের সকল স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। আটলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে ও ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাডঃ প্রতাপ কুমার রায়ের গত ২/৩দিন ধরে বিরামহীন চেষ্টায় শত শত শ্রমিক নিয়ে বাঁধটি রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহম্মেদ সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছে। জানা যায়, জোয়ারের পানির প্রচন্ড চাপের কারণে গত ৯এপ্রিল বিকালের দিকে কাঁঠালতলা মাগুরখালি সড়কের কুলবাড়িয়া স্লুইচ গেটের সামনে থেকে হঠ্যাৎ করে নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এতে কুলবাড়িয়া স্লুইচ গেট হতে শুরু করে কুলবাড়িয়া বিল, নিচুখালি বিল, চুকনগর বিল, চাকুন্দিয়া বিল, ছোট চ্যাংমারী বিল, বড় চ্যাংমারী বিল, মালতিয়া বিল, মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের সকল বিল, তালা উপজেলার কয়েকটি বিল, গাদরছা বিলসহ কয়েকটি বিলের হাজার হাজার হেক্টর ইরি ধানের জমিতে নোনা পানি উঠে গেছে। আবার কিছু কিছু ধার ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে মানুষ যে স্বপ্ন দেখে বেঁচে ছিল। তাও এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হওয়ার উপক্রম প্রায়। মাত্র ১০/১৫দিন পর বেশির ভাগ জমির ইতি ধান কাটা যাবে বলে জানা যায়। কিন্তু ১০/১৫দিন পরে তো দূরের কথা নোনা পানি উঠা জমির ধান আদেও কাটা যাবে বলে মনে হয় না। এদিকে প্রচন্ড পানির চাপে ৪০/৫০টি মৎস্য ঘেরের ভেড়ি বাঁধ ছুটে গিয়ে একাকার হয়ে গেছে। অনেক মৎস্য ঘেরে এমনভাবে পানি প্রবেশ করেছে যে তা আর এবছর কোনক্রমেই বের করা সম্ভব নয়। এদিকে একাধিক ব্যক্তি এভাবে গেট ভেঙ্গে পানির প্রবেশ করার ব্যাপারে অনিমেষ জোয়াদ্দার নামে এক ব্যক্তিতে দায়ি করেছে। যাদের ইরি ধানের বেশি ক্ষতি হয়েছে তার মধ্যে আরশ বিশ্বাস, নিখিল মন্ডল, শীবপদ মন্ডল, নিখিল রায়, বিধান জোয়াদ্দার, পার্থ সরদার, নিত্য সরদার, দেবাশীষ মন্ডল, বিকাশ সরদার, আশুতোষ মন্ডল, স্বপন সরদার, নগেন্দ্রনাথ মন্ডল, সুশান্ত বিশ্বাস, পুলিন সরদার, সন্তোষ সরদার, সুশীল সরদার, সুবোধ মন্ডল, ব্রজেন মন্ডল, সুনীল মন্ডল প্রমুখ। এব্যাপারে অনিমেষ জোয়াদ্দার বলেন, আমজাদ মোড়ল, সাত্তার মোড়ল, নোয়া মিয়া ও হবি মোড়ল তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি হিসাবে তাকে ৩বছরের জন্য লিজ চুক্তি পত্রের মাধ্যমে ঘের দেয় এবং তারা হারির টাকা গুলো মসজিদ ও মন্দির উন্নয়নের জন্য টাকা গুলো দান করে দেয়। তিনি সেই মোতাবেক ঘেরে মাছ চাষ করে আসছে। কিন্তু গত ২০১৯সালে পাউবো জমিটি সরকারের দাবি করে তাকে একটি নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশ পাওয়ার পর তিনি সেই দিন থেকে ঘের ছেড়ে চলে আসেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাডঃ প্রতাপ কুমার রায়, গত ৯এপ্রিল বিকালে বাঁধটি ভেঙ্গে ভিতরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। এসংবাদ তিনি শোনা মাত্রই ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকদের সহযোগীতায় প্রাথমিক পর্যায়ে বাঁধটি আটকে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেটা আবারও ছুটে যাওয়ায় গত ২/৩দিন ধরে তিনি তার লোকজন নিয়ে রাতদিন পরিশ্রম করে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে শত শত শ্রমিক খাঁটিয়ে বাঁধটি বাঁধাসহ পুরনো স্লুইচ গেটটি আপাতত বন্দ করে দেয়ার চেষ্টা করেন। এতে তার প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। এখনো কাজ শেষ হয়নি বলে জানান তিনি। তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, হঠ্যাৎ বাঁধটি ভেঙ্গে গিয়ে ভিতরে নোনা পানি প্রবেশ করে ইরি ধানের যে অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তা কোনক্রমেই পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে আর যাতে ভিতরে পানি প্রবেশ না করতে পাবে সে ব্যবস্থা তিনি করার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশ পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম বলেন, কিছু অতিলোভী মানুষের কারণে এই বাঁধটি ছুটে গিয়ে এতদাঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম প্রায়। তাছাড়া অনেক মৎস্য ঘেরও তলিয়ে গেছে। তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আমার একান্ত দাবি, যতদ্রুত সম্ভব পুরনো স্লুইচ গেটটি মেরামত করাসহ এ অঞ্চলের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি মজবুত করে বাঁধা হোক। তা না হলে ভবিষ্যতে আবার এভাবে বাঁধ ভেঙ্গে মানুষের ক্ষতি হবে। সুন্দরবনটাইমস.কম/নিজস্ব প্রতিবেদক সংবাদটি ৪৭৬ বার পড়া হয়েছে আপনার মতামত লিখুন : আরও পড়ুন চুকনগরে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করায় ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা চুকনগরে ইঞ্জিন ভ্যান চালাতে গিয়ে ৬ বছরের শিশুর করুন মৃত্যু