Tiktok, Likee, Bigo Live এর আড়ালে যৌনতার ফাঁদ থেকে সন্তানকে দূরে রাখার উপায় প্রকাশিত: ৫:২৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২১ | আপডেট: ৫:৩২:অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২১ লেখক: জাহিদ হাসান। শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। বর্তমান করোনা মহামারির চেয়েও কিশোর গ্যাং এবং কিশোরীদের অপরাধ মহামারির আকার ধারণ করতে চলেছে। এ সব খবরের সংখা দিন দিন বেড়েই চলেছে, সেটি স্পষ্ঠ। আর এ সব কিশোর গ্যাংয়ের পেছনে রয়েছে এলাকাভিত্তিক কিছু অশ্লীল, রুক্ষ ও মাদকাসক্ত কথিত বড়ভাই নামক অদ্ভূদ জীবদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা। এছাড়া কিশোর কিশোরীদের খারাপ করার বর্তমানে অন্যতম উপাদান Smart phone এর Likee, Tik-Tok এর মতো সস্তা Apps ও পর্ণগ্রাফি । এ সব সমস্যার কারণ ও সমাধানের বিভিন্ন দিক নিয়ে লিখেছেন , জাহিদ হাসান এবং সার্বিক সহযোগিতা করেছেন, ব্যারিস্টার তাছনিম ফেরদৌস (সহকারী প্রফেসর, আইন বিভাগ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি)। বাংলাদেশের দ-বিধি ৮২ ধারা অনুযায়ী ৯ বছর বা ৯ বছরের বেশি এবং ১৮ বছরের কম বয়স্করাই হল কিশোর বা কিশোরী আর উক্ত বয়স্ক কিশোর কিশোরী কর্তৃক সংগঠিত সামাজিক মূল্যবোধ এবং আইন বিরোধী কাজই হল কিশোর অপরাধ। অপরাধীরা সামঞ্জস্যহীন কিশোর বা কিশোরীরা। প্রত্যেক জাতির জন্য তার দেশের শিশু কিশোরদের মানসিক সুস্থতা একান্ত দরকার, কারণ শিশু কিশোররাই দেশের ভবিষ্যৎ। কিশোর অপরাধীরা চুরি, খুন, জুয়াখেলা, মদ্যপান, ইয়াবা বা অন্যান্য নেশাদ্রব্য সেবন ভবঘুরেমীপনা, পকেটমারা, মারামারি ও যৌন অপরাধে লিপ্ত থাকে। এছাড়া কিশোর কিশোরীরা সহজে অর্থাৎ রাতারাতি তারকা বনে যাওয়ার নেশায় Likee , TikTok ও Bigo Live এর মত সস্তা Apps ব্যাবহার করে বিভিন্ন অশ্লীল কন্টেন্ট তৈরী করে সস্তা বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করে , এমন কি Likee , TikTok ও Bigo Live গ্যাং গড়ে তুলে তারা নিজেরা বিপদে পড়ে আবার অন্যকেও বিপদে ফেলায়। কোন কোন সময় উক্ত Apps ব্যাবহার করে, অনেক কিশোরী পতিতার মত অন্ধকার রাস্তায়ও পা বাড়াচ্ছে। সময় টিভির ৮ই অক্টোবর ২০২০, একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ভয়ঙ্কর তথ্য দেখা গেছে, মাধ্যমিকে পড়ুয়া কয়েক জন কিশোরী গাজীপুরের একটি পার্কে, রিসোর্ট ভাড়া করে TikTok ও Likee গ্যাং এর আড়ালে তাদের সতীত্ব বিলিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। রাজধানীর কুড়িল এলাকায় পাঁচ কিশোরী TikTok ও Likee ব্যবহার করে রাতারাতি তারকা হবার নেশায় ধর্ষনের শিকার হয়। তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন সেলিম মনে করেন, Likee Apps হল, একটি যৌনতা বিতরণের ইন্টার একটিভ মিডিয়া, যে মিডিয়ার মাধ্যমে একে অপরের সাথে যুক্ত হয়, তারা বন্ধুত্ব করে এবং বন্ধুত্ব একটা নোংড়ামী বন্ধুত্বে পরিণত হয়, তারা একে অপরকে একেবারে খোলামেলা ভাবে প্রকাশ করে, কখনও এটা টাকার বিনিময়ে হয়, আবার কখনও বন্ধুত্বের বিনিময়ে হয়। চলচিত্র নির্মাতা ও চিত্রশিল্পী শাহনেওয়াজ কাকলি Likee কে ভার্চুয়াল যৌনপল্লী মনে করেন। সার্বভৌমত্ত, অখন্ডতা এবং প্রযুক্তি নিরাপত্তা এই তিনটি বিষয়ের কথা ভেবে Likee , TikTok ও Bigo Live এর মত Apps গুলো বন্ধ করে দিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত সহ আরো অনেক দেশ। বর্তমানে Likee , TikTok ও Bigo Live বন্ধের দাবি জানিয়ে হাইকোটে মামলা করেছেন একজন বিজ্ঞ আইনজীবী। বর্তমানে কিশোররা পাবজী ও ফ্রী ফায়ারের মত গেইমসে প্রতিপক্ষকে কেটে ফেল, মেরেফেল, গুলি কর, বোমা মার, অর্থাৎ গুলি ও বোমা মেরে হামলা করে, গেইমস এর শেষ পর্যন্ত যেতেই হবে, এমন বিকৃত মানশিকতা তৈরি হয়, আর এর ফলে কিশোরদের মাঝে আক্রমনাত্মক মনোভাবের সৃষ্টি হয় এবং বাস্তব জীবনে তারা এহেন অপরাধ করতে মোটেও দ্বিধাবোধ করে না। আর গাড়ির গেইমস খেলে, গেইমসের ষ্টাইলে গাড়ি চালাতে যেয়ে কত পথচারী ও নিজে নিহত ও আহত হয়েছে সেটাও উদ্বেগ জনক ! এলাকাভিত্তিক কিছু অশ্লীল রুক্ষ মাদকাসক্ত কথিত বড়ভাইয়েরা তাদের মাদক ও সন্ত্রাসী গ্যাং বৃদ্ধির জন্য কিশোরদেরকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে। এই কথিত বড়ভাইদের দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে কিশোররা মাদক ক্রয়-বিক্রয় সহ মাদক গ্রহণ ও এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করা, এমনকি হত্যার মত জঘন্য কাজ করতেও দ্বীধাবোধ করে না। এর বড় উদাহরন হতে পারে বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা, মোহাম্মদপুরের মহাসীন হত্যার মত আরো অজানা অনেক ঘটনা। গোয়েন্দা পুলিশের বিশ্লেষণে দেখা গেছে এ সব কিশোর গ্যাংদের পোশাক পরিচ্ছেদে এসেছে ভিন্নতা এবং গোয়েন্দা পুলিশ আরো জানান প্রায় সব কিশোর গ্যাংই মাদকের সাথে জড়িত। ঢাকা শিশু আদালতের ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান বলছে গত দেড় বছরে শুধুমাত্র ঢাকাতে ঘটেছে ১৩টি খুনের ঘটনা যাতে জড়িত ১২০ কিশোর। গ্যাং সদস্যরা বিশেষ ষ্টাইলে চুল কাটে, চুলে রং করে ও মাঝে মাঝে কানে রিং ও পরে। আর এরা সবাই নিজেরা ভাই-ব্রাদার নামে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। (সূত্র: Masranga ও Independent TV). শিশু কিশোরদের খারাপ হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ি তার পরিবার অর্থাৎ পিতা-মাতা। যেসব পরিবারে পিতা-মাতার মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ নেই, কোন ভাল আদর্শ লালন করে না, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না, পিতা-মাতা নিজেরাই বিভিন্ন দূর্নীতি ও অপকর্মের সাথে জড়িত, সেসব পরিবারের শিশু কিশোরা খারাপ না হওয়াই অস্বাভাবিক। অধিকাংশ পিতা-মাতাই চান, তাদের সন্তান পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হোক, কোটি কোটি টাকা ও একাধিক বাড়ি-গাড়ির মালিক হোক। কিন্তু তাদের ত্যাগি, সৎ, ন্যায়পরায়ন, পারষ্পরিক সম্মান ও মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয় না। রাষ্ট্র ও সমাজে শিশু কিশোরদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে সেটা তাদের বোঝানো হয় না। রাসুলুল্লাহ্ (স:) বলেছেন: ‘সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমাদের প্রত্যেকেই স্বীয় অধীনস্থ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। সুতরাং শাসনকর্তা যিনি জনগণের রক্ষক, তিনি স্বীয় অধীনস্থ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন, আর প্রত্যেক পুরুষ স্বীয় পরিবারের লোকদের রক্ষক এং তিনি নিজের অধীনস্থ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। আর প্রত্যেক নারী স্বীয় স্বামীর পরিবারের লোক ও তার সন্তাদের দায়িত্বশীল এবং তিনি তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। কোনো লোকের চাকর স্বীয় মনিবের সম্পদের রক্ষক এবং সে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ রাসুলুল্লাহ্ (স:) আরো বলেছেন, তাদের সন্তানদের দায়িত্ব তাদের উপর অর্পণ করা হয়েছে, অর্থাৎ পিতা-মাতার উপর অর্পন করা হয়েছে। (বুখারি ও মুসলিম) সুতরাং পিতামাতা বা অভিভাবক হিসাবে, আপনাকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে, আপনার সন্তানের ব্যাপারে। বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৮৯ ধারা অনুযায়ী পিতা-মাতাকে তার সন্তান কে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার দিয়েছে। এ ধারা অনুযায়ী সন্তান যেটা ভাল মনে করে না, কিন্তু সন্তানের মঙ্গলের জন্য পিতা-মাতা বৈধ যেকোন ধরনের কাজ করতে পারবে। সুতরাং সন্তানের মঙ্গলের জন্য, তার কোন সম্মতির প্রয়োজন নেই। উদাহরণ হতে পারে: আপনার সন্তান মোবাইল ফোন, কম্পিউটার বা অন্যান্য ইলেকট্রিক ডিভাইসে কি দেখছে, কি স্ক্রল করছে, কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহার করছে, বাবু খাইছ, এমন বিকৃত কন্টেন্ট সমৃদ্ধ গান শুনবে বা শুনবে না, কোন ওয়েব পেজে ব্রাউজিং করছে, ঘরের বাহিরে কোথায় যাচ্ছে, কোন বন্ধুর সাথে মিশবে বা মিশবে না, এগুলো বন্ধ বা চালু রাখার অধিকার পিতা-মাতা বা অবিভাবক হিসাবে আইন আপনাকে দিয়েছে। সম্প্রতি আসাদুজ্জামান নূর(সাবেক সংষ্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী, প্রখ্যাত অভিনেতা ও বর্তমান সাংসদ) তিনার একটি বক্তব্যে বলেছেন, “বর্তমানে শিশু কিশোররা ভাল বই না পড়ার কারণে এবং ভাল মানুষের সাথে না মেশার কারণে মস্তিষ্ক অনউর্বর হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে, সন্তানকে সু-সন্তান হিসাবে গড়ে তুলতে পারছি না।” এ অনউর্বর মস্তিষ্ক, উর্বর করার জন্য পরিবারের পাশাপাশি, বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, সাংষ্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে, তাহলে পরিবার, দেশ, সমাজ তথা গোটা পৃথিবী একটি ভবিষ্যৎ বাসযোগ্য পৃথিবীতে পরিণত হবে বলে আমরা আশা করি। Bigo LiveLikeeTiktok সংবাদটি ১৫১৫ বার পড়া হয়েছে আপনার মতামত লিখুন : আরও পড়ুন “হরিষে বিষাদ” আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস: কেন এই ভালোবাসা দিবস?