গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি, কেশবপুরে লোকসান এড়াতে কম দামে গরু বিক্রি! প্রকাশিত: ২:৩১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০ | আপডেট: ২:৩১:অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০ যশোরের কেশবপর উপজেলার ভোগতি গ্রামের বাবুল হোসেনের গরুর খামার যশোরের কেশবপুরে গবাদি পশুর প্রধান খাদ্য বিচালির সংকট দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে গরুর অন্যান্য সুষম খাদ্যের দামও। গত ৩ বছর ধরে নদী খনন কাজ চলমান থাকায় নিচু এলাকার জলাশয়গুলোতে আমন ও বোরো আবাদ হয়নি। এছাড়া সম্প্রতি ঝড় ও অবিরাম বৃষ্টিতে বিচালি ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। যার কারণে বিচালির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ৫০০ টাকায়ও মিলছে না এক পোন (৮০ গোন্ডা) বিচালী। দিশেহারা হয়ে খামারী ও চাষীরা লোকসান এড়াতে কম দামে বেঁচে দিচ্ছেন গরু। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বোরো মৌসুমে ১৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। কিন্তু গত ৩ বছর ধরে নদী-খাল খনন কাজ চলমান থাকায় নিচু এলাকার জলাশয়গুলোতে আমন ও বোরো আবাদ হয়নি। যে কারণে গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর কম জমিতে বোরো আবাদ হয়। এরপরও বোরো ধান ঘরে তোলার সময় ঝড় ও অবিরাম বৃষ্টির সাথে শ্রমিক সংকটে চাষীরা সময় মত ঘরে ধান তুলতে পারেনি। ক্ষেতেই ভিজে বিচালি নষ্ট হয়েছে। ফলে মানুষের প্রধান খাবারের যোগান মিটলেও গবাদি পশুর খাবার বিচালির তীব্র সংকট দেখা দেয়। এলাকা ঘুরে জানা গেছে, এ উপজেলায় খামরের মাধ্যমে কিছু মানুষ গরু মোটাতাজাকরণ করে থাকে। এর বাইরে প্রতিটি পরিবার অনন্ত: একটি করে গরু মোটাতাজাকরণ করে পরিবারে স্বচ্ছলতার যোগান দেয়। এর পাশাপাশি দুধের গরুর পালনও দেখা যায়। অধিকাংশ চাষীর গরুর বিচালির যোগান মেটাতে বাড়ির আঙ্গিনায় ১ থেকে ২ কাঠা জমিতে উন্নতজাতের ঘাসের প্লট রয়েছে। এতে মধ্যবিত্তরা গরু কিনে ৩ থেকে ৪ মাস পালনের পর বেঁচে স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চালাতো। কিন্তু বর্তমান গবাদি পশুর প্রধান খাবার বিচালির তীব্র সংকটসহ অন্যান্য সুষম খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। গরুর খামারী বাগদহা গ্রামের আসাদুজ্জামান, বায়সা গ্রামের গনেশ ঘোষ ও ভোগতী গ্রামের বাবুল হোসেন বলেন, বিচালির অভাবে গবাদিপশু পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। বেশী দাম দিয়ে কোনরকম বিচালি কিনে আনলেও গরুর পেট ভরছে না, গরু শুকিয়ে যাচ্ছে। গরুর শুকনো বা সুষম খাবারের দামও বেড়ে গেছে। ধানের কুঁড়ো, গমের ভূষি, সরিষার খৈলের দামও রেড়েছে অস্বাভাবিক। মাস খানেক আগে বিচালীর পোন (৮০ গোন্ডা) ছিল ২৫০ টাকা, তা এখন বেড়ে হয়েছে ৫০০ টাকা। তাও পাওয়া যাচ্ছে না। সামনে কার্তিক-অগ্রহায়ন মাসে আমন ধান না ওঠা পর্যন্ত বিচালির দাম আর কমবে না বলে তিনি অভিযোগ করেন। ধানের কুঁড়োর বস্তা (৫০ কেজি) ছিল ৪৫০ টাকা, তা এখন বেড়ে হয়েছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, গমের ভূষি (৫০ কেজি) ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা, এখন ১ হাজার ৬০০ টাকা, সরিষার খৈল বস্তায় বেড়েছে ২০০ টাকা। এ অবস্থায় খামারী ও চাষীরা বিচালির অভাবে কম দামে গরু বেঁচে দিচ্ছেন। এছাড়া এ অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘ ৭ মাস করোনাকাল অতিক্রম করায় তাদের হাতে গচ্ছিত কোন টাকা নেই। যার কারণে কম দামেও গরু কেনার সামর্থ নেই তাদের। একমাস আগে দেশী যে গরুর দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। এ ব্যাপারে উপজেলা ভেটেরিনারী সার্জন ডাক্তার অলোকেশ কুমার সরকার বলেন, এ উপজেলায় ১৯২টি গরুর খামার রয়েছে। গরু রয়েছে ৯০ হাজার। এতে প্রতিদিন ১৮০ মেট্টিক টন খড় লাগে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ২০ লাখ টাকা। এছাড়া কেশবপুরে ২০০ একর জমিতে নেপিয়ার পাকচং ঘাস চাষ করা হয়েছে। যা থেকে ৬৫ হাজার কেজি ঘাস উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিন প্রয়োজন ৯ লাখ কেজি ঘাস। লাগানো ঘাস দিয়ে চাহিদার ১০ ভাগের এক ভাগও পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ঘাস চাষে উদ্বুদ্ধ করতে ইতোমধ্যে ১ হাজার ২০০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সংবাদটি ৩৮৮ বার পড়া হয়েছে আপনার মতামত লিখুন : আরও পড়ুন কেশবপুরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত আজ মধু কবির ১৯৯তম জন্মবার্ষিকী, সাগরদাঁড়িতে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা শুরু