ভালবাসার গল্প: “অতৃপ্ত ভালবাসা” (শেষ পর্ব) প্রকাশিত: ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৪, ২০২০ | আপডেট: ১:০০:পূর্বাহ্ণ, জুন ২৪, ২০২০ তৃষা: ছুটটে ছুটটে আসে। জয়া: কি হয়েছে? তৃষা: রোহিত আর রাজ নিউমার্কেট গেছে। জয়া: তাতে কি? তৃষা: কলেজের দুটি ছেলে এক্সিডেন্ট করছে! আদিত্য স্যার আসে। জয়া: স্যার কি হয়েছে? স্যার: আমি যেয়ে দেখছি। আশা: আমরাও যাব। স্যার দুটি সিএনজি ডাকে। তারা ১৫মিনিট পর নিউমার্কেট পৌঁছায়। মানুষের ভিড়ে পা ফেলা যায় না। ভীড় ঠেলে স্যার ও জয়ারা এগুতে থাকে। যত কাছে যায় তাদের সবার বুকটা ফাঁকা হতে থাকে। ভিড় ঠেলে অনেক কষ্টে তারা সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। রক্তমাখা দেহ নিয়ে পড়ে আছে একটি ছেলে। মুখ দেখা যায় না। সাদা পাঞ্জাবি রক্তে লাল হয়ে গেছে। সবার চোখ ছেলেটার দিকে। প্রত্যেকের চোখে হতাশা ও জিজ্ঞাসা। পুলিশ কাউকে লাশের পাশে যেতে দেয় না। আদিত্য স্যার একজন পুলিশ অফিসারের সাথে কথা বলে। অফিসার: দু’জন ছেলে ছিল। আর একজন এখন হসপিটালে। স্যার: আমি একটু কাছে যেয়ে দেখতে পারি? ছেলেটা হয়তো আমার কলেজের! অফিসার: ঠিক আছে; আসুন। জয়া: স্যার আমিও যাবো। স্যার: এসো। স্যার জয়ার হাত ধরে হাটতে থাকে। জয়া মনে মনে আল্লাহকে ডাকে। যেন আমাদের কলেজে না হয়। জয়ার পা থেমে যায়। গলা শুকিয়ে যায়। কাছে যেয়ে জয়া দেখে ছেলেটির হাতের পাশে একটি লাল গোলাপ এবং গোলাপের নিচের দিকে ডালে জড়ালো একটি ছোট কাগজ। স্যার লাশের সামনে যেয়ে মুখটা দেখার চেষ্টা করে। মুখটা দেখে স্যার চোখ দুটি বন্ধ করে। জয়া স্যারের দিকে হতাশার দৃষ্টিতে তাকায়। স্যার: জয়া এটা আমাদেরই রোহিত। জয়া কোন কথা বলে না। কাঁদেও না। একটু নিচু হয়ে গোলাপ ফুলটা হাতে তোলে। ধিরে ধিরে কাগজের ভাজ খুলে। কাগজে সুন্দর করে ছোট ছোট অক্ষরে লেখা “আমার জয়া, তুমি শুধু আমার। যতদিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকব, প্রতিটা দিনের প্রত্যেকটা মুহূর্ত শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো। আর মৃত্যুর পরের জীবনেও শুধু তোমারই থাকবো। আমার প্রভুর নামে প্রতিজ্ঞা করছি। তুমি থাকবেতো, শুধুই আমার?” তোমারি রোহিত…….. চিঠিতা পড়ে জয়া কি যেন বলতে চায়। বলতে পারে না! রোহিতের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু সময় পর সে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায় রাস্তায়। তৃষা, পলি ওরা ছুটে আসে। আদিত্য স্যার চিঠিটা জয়ার হাত থেকে নেয়। জয়ার যখন জ্ঞান ফিরে, তখন সে বাসায়। আম্মু, মামনি তার পাশে বসে। জয়া মামনির দিকে তাকায়। আম্মু: জয় তোর বড় আব্বুকে ডেকে দে। আব্বু: মা এখন কেমন লাগছে? জয়া কথা বলে না। জয়া হাতটা বাড়িয়ে মামনির হাত ধরে। কোনো কথা বলে না। জয়ার চোখ দিয়ে শুধু পানি গড়িয়ে পড়ে। মামনি, আম্মু, জয় সবাই কাঁদে। জয়া কারোর সাথে একটাও কথা বলে না। সন্ধ্যায় আদিত্য স্যার আসেন জয়াকে দেখতে। স্যার জয়ার হাতে রোহিতের সেই চিঠিটা দেয়। চিঠিটা হাতে নিয়ে জয়া চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। আব্বু, আম্মু, পাপা, মামনি, জয় সবাই ছুটে আসে। আব্বু ও পাপা দু’জনের চোখে পানি। মামনি চিঠিটা নিতে যাই। জয়া দেয় না। তিনদিন পর হাসপাতাল থেকে ফিরে রাজ আসে জয়ার সাথে দেখা করতে। তৃষা, পলি, আশা, সাথী, কাকুলী ওরাও সবাই আসে। রাজকে জড়িয়ে ধরে জয়া কাঁদতে থাকে। তৃষা, পলি সবাই কাঁদে। আম্মু: রাজ বাবা, জয়াকে একটু কিছু খেতে বলো। আজ তিনদিন কিছুই খাইনি। রাজ নিজের হাতে অল্প কিছু খাবার জয়াকে খাইয়ে দেয়। জয়ার আর পড়াশুনা হয় না। অনেক ভালো ভালো জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসে। জয়া রাজি হয় না। তার শুধু একটাই কথা, “আমি কখনো বিয়ে করবো না”। আমাকে জোর করে বিয়ে দিতে গেলে আমি আত্মহত্যা করবো। জয়া ছোট একটা কোম্পানিতে চাকরি নেয়। আদিত্য স্যার চাকরীটা ঠিক করে দেয়। মনে অনেক কষ্ট নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় জয়ার আব্বু-আম্মু, পাপা-মামনি। আশা, পলি, সাথী, তৃষা, কাকুলী, রাজ সবার বিয়ে হয়ে যায়। প্রথম দিকে সবাই জয়াকে বিয়ে করতে বলতো। পরে আর বলে না। আজ ২০ বছর হয়ে গেছে রোহিতের মৃত্যু। জয়ার বয়স এখন ৪০ বছর। জয়া জয়ের কাছেই থাকে। জয় একজন ডাক্তার। জয়ের একটা ছেলে আছে। যার নাম জয়া রোহিত রাখছে। জয়ের বউ জয়াকে খুব ভালবাসে। মাঝে মাঝে তৃষা, সাথী ওদের সবার সাথে দেখা হয়। রাজ ঢাকাতে থাকে। ওর এক ছেলে, এক মেয়ে। ঢাকা থেকে বাসায় এসে রাজ আগে জয়ার সাথে দেখা করে। এখনও রাজ জয়াকে জুলিয়েট বলে ডাকে। জয়া সারাদিন নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখে অফিসে। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে জয়ের ছেলের সাথে খেলা করে। রাত বাড়ে, সবাই ঘুমাই, জয়া জেগে থাকে। প্রতিটা রাত জয়া কেঁদে কাটায়। জয়া একা বসে, রাত দুইটা বাজে। রোহিতের সেই চিঠিটা সামনে নিয়ে, চোখ দুটি চিঠির উপর রেখে জয়া আস্তে আস্তে বলে, “আমি শুধু তোমারই থাকবো”……………… …………………সমাপ্ত…………………….. …………………………………… প্রথম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন দ্বিতীয় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন তৃতীয় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন চতুর্থ পর্ব পড়তে ক্লিক করুন পঞ্চম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন শেষ পর্ব পড়তে ক্লিক করুন …………………………………… অতৃপ্ত ভালবাসাভালবাসার গল্পলেখিকা নাজনীন সংবাদটি ৭১৩ বার পড়া হয়েছে আপনার মতামত লিখুন : আরও পড়ুন “হরিষে বিষাদ” আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস: কেন এই ভালোবাসা দিবস?