কেশবপুরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত

প্রকাশিত: ১:৫৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪ | আপডেট: ১:৫৯:অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
ছবি: কেশবপুর পৌরসভার মধ্যকুল তেলপাম্প এলাকার পানিবন্দি মানুষের বর্তমান দৃশ্য।
যশোরের কেশবপুরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পৌরসভাসহ উপজেলার মজিদপুর, সদর, পাঁজিয়া, হাসানপুর, বিদ্যানন্দকাটি, সুফলাকাটি, সাগরদাঁড়ি, সাতবাড়িয়া, মঙ্গলকোট ও গৌরিঘোনা ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চল গত তিন দিনের টানা  বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হরিহর ও বুড়িভদ্রা নদে স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা না থাকায় নদ উপচে এলাকায় পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমন খেতের পাশাপাশি মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে এলাকার মানুষ। প্রায় ৩ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাগদহা, মজিদপুর, বায়সা, দেউলি, প্রতাপপুর, লক্ষিনাথকাটি, শ্রীফলা, আটন্ডা, মঙ্গলকোট, কালিচনপুর, ময়নাপুর, আড়ুয়া, পাঁজিয়া, মনোহরনগর, পাথরঘাটা, সানতলা, বগা, নেহালপুর, হাসানপুর, কাটাখালি, মাদারডাঙ্গা, সাতবাড়িয়া, শ্রীরামপুর, শিকারপুর, পৌরসভার আলতাপোল, কেশবপুর সাহাপাড়া, মধ্যকুল, সাবদিয়া, শহরের কাঁচা বাজার, চারানি বাজার, মাছ বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় এলাকার মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। অনেক মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। আমন ধান ও কাঁচা ফসল টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। প্রায় তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বাগদহা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তার মাছের ঘের ভেসে গেছে। প্রায় ৩ লাক টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। আমন ধান ও কাঁচা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। গ্রামপুলিশ আবদুল কাদের বলেন, তার বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। কাঁচা ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। মধ্যকুল এলাকার সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাংবাদিক রাবেয়া ইকবাল, রীমা খাতুন, আয়ুব খান, বাবলুর রহমান, গোলাম মোস্তফা সহ একাধিক মানুষ বলেন, তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে তাদের বাড়ির ভেতর পানি ঢুকে হাঁটু সমান হয়েছে। গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ওই এলাকার শেখাপাড়াটিও তলিয়ে গেছে । কেশবপুর সদর ইউনিয়নের মূলগ্রামের কৃষক রুহুল আমিন বলেন, তাদের বলধালি বিলের প্রায় দেড় বিঘা জমির আমন ধান তলিয়ে গেছে। ওই বিলের একাধিক কৃষকের আমন খেতসহ মাছের ঘের ডুবে গেছে। মধ্যকুল গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, তার মাছের ঘের ভেসে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ এলাকায় অনেকের পুকুর তলিয়ে গেছে।
শহরের কাঁচা বাজার আড়তের সভাপতি মশিয়ার রহমান বলেন, বাজারের ভেতর পানি ঢুকে যাওয়ায় ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মালামাল আনা নেওয়া করতে বিপাকে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। মেইন সড়কের ওপর৷ কাঁচা বাজার বসাতে হচ্ছে।
কেশবপুর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, শহরের চারানি বাজার, মাছ বাজার, কাঁচা বাজার, মাংসের বাজার, ধানহাটা পানিতে তলিয়ে গেছে। ব্যবসায়ীসহ এলাকার মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
গত মঙ্গলবার উপজেলার পাঁজিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর -ব্রাহ্মণডাঙ্গা এলাকায় হরি- ঘ্যাংরাইল অবাহিকার জলাবদ্ধতা নিরশন কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয় । সভায় অধ্যাপক কফিল উদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হরি-ঘ্যাংরাইল অববাহিকার জলাবদ্ধতা নিরশন কমিটির সভাপতি পাউবোর সদস্য মহিউদ্দিন বিশ্বাস। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, আব্দুল গফুর গাজী, মাহমুদুল হাসান, এনায়েত আলি, মাস্টার আব্দুল ওহাব বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, দ্রুততম সমযে়র মধ্যে হরি ঘ্যানরাইল নদীর নাব্যতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ৫০ কিলোমিটার নদী খনন এর দাবি জানানো হয়। এছাড়াও অত্র অঞ্চলের বিলগুলোতে ধান উৎপাদনের জন্য সেচ ব্যবস্থা দাবি জানানো হয়।
কেশবপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, পৌরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডেই পানি ঢুকে পড়েছে। টানা বৃষ্টি ও হরিহর নদের উপচে পড়া পানির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে হাজারো মানুষ বিপাকে পড়েছে।  হরিহর ও বুড়িভদ্রা নদে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমায় পৌঁছেছে। হরিহর নদের মধ্যকুল সাহাপাড়া ও খোঁজাখালি খালের স্লুইস গেটের দক্ষিণ অংশে ভবানিপুর ও দক্ষিণপাড়ায় পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকাসহ সড়ক প্লাবিত হয়েছে। কেশবপুর শহরের চারানি বাজার ও ট্রাক টার্মিনালের পূর্ব অংশে হরিহর নদের পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে পৌর এলাকায় পানিবন্দি হয়েছে ১ হাজার ৩০ পরিবার। ভেসে গেছে মাছের ঘেরসহ অসংখ্য পুকুর। নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে জলাবদ্ধ এলাকা রূপ নিয়েছে বন্যায়। জলাবদ্ধ মানুষেরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ গবাদী প্রাণি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও হরিহর ও বুড়িভদ্রা নদের উপচে পড়া পানির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হরিহর নদের শাখা খোঁজাখালির স্লুইস গেটের দক্ষিণ অংশে পানি উপচে নতুন করে পৌর এলাকার ভবানিপুর ও দক্ষিণপাড়া প্লাবিত হয়েছে। ওই এলাকার মানুষের বাড়িঘরে এখন হাঁটুপানি। এ ছাড়া হরিহর নদের মধ্যকুল সাহাপাড়া অংশে পানি ঢুকে পড়ায় বিপাকে পড়েছে এলাকার মানুষ। ভবানীপুর এলাকায় ভেসে গেছে মাছের ঘের ও পুকুর।
ভবানীপুর এলাকার ফারুক খান বলেন, একদিনের ব্যবধানে তার বাড়িতে এখন হাঁটুপানি। একই এলাকার গৃহবধূ শাহিদা সুলতানা বলেন, তাদের পুকুর ভেসে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মাছ চলে গেছে। ভেসে গেছে রফিকুল ইসলামের একটি মাছের ঘের। এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে এখন বন্যায় রূপ নিয়েছে।
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সজীব সাহা বলেন, মজিদপুর, পাঁজিয়া, মঙ্গলকোট, হাসানপুর, সুফলাকাটি, গৌরিঘোনা, সদর ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন মাছের ঘের এবং পুকুর ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘের ও পুকুরের সংখ্যা নিরূপণের কাজ শুরু করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হেক্টর জমিতে আমন ধান ও কাঁচা ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এলাকা ঘুরে খোঁজ খবর নিয়ে ক্ষতির সংখ্যা নিরূপণের কাজ শুরু করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার বলেন, গত কয়েকদিনে হরিহর ও বুড়িভদ্রা নদে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া হরিহরের শাখা খোঁজাখালি খালের স্লুইস গেটের দক্ষিণ অংশে পানি উপচে ভবানিপুর এলাকায় ঢুকে পড়ছে। এতে ওই এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তাছাড়া এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আপনার মতামত লিখুন :

মশিয়ার রহমান। নিজস্ব প্রতিবেদক। কেশবপুর, যশোর