ডায়াবেটিস প্রতিরোধে তাল-ওলকচু: পাটকেলঘাটার কৃতি সন্তান ড. শাহিনুরের অনবদ্য আবিষ্কার

প্রকাশিত: ১:২১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৫, ২০১৯ | আপডেট: ১:২৩:অপরাহ্ণ, জুলাই ৫, ২০১৯

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

ডেক্স রিপোর্ট:
সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার বড়বিলা গ্রামের মরহুম শেখ আনছার আলীর পুত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফলিত ও পুষ্টি খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ড. শেখ শাহিনুর রহমান। তিনি শিক্ষাজীবনে মাধ্যমিক পর্যায়ে রাজশাহীতে, কলেজ জীবন যশোরে এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত ও পুষ্টি খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগে। শিক্ষা জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে তিনি প্রথমস্থান, প্রথম বিভাগ, প্রথম শ্রেণী অর্জন করেন এবং ২০১০ সালে ফলিত ও পুষ্টি খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কুষ্টিয়া ইবিতে যোগদান করেন। ২০১৩ সালে তিনি সহকারি অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তাল ও ওলকচু নিয়ে অনবদ্য স্বীকৃতিস্বরূপ ইবি’র ২৪৫তম সিন্ডিকেট সভা তাঁকে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি প্রদান করেন।


সূত্রে জানা যায়, তাল(বৈজ্ঞানিক নাম Borassus flabellifer) ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক অঞ্চলেরই গ্রীষ্মকালীন জনপ্রি ফল। কচি তালের শাঁস, পাঁকা তালের রস এবং অঙ্কুরিত তালের আঁটির ভেতরের সাদা শাঁস বাংলাদেশ সহ এশিয়ার অনেক দেশে একটি জনপ্রিয় খাবার। তাল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল হলেও খাদ্য কুসংস্কারের (Food Taboos) কারনে অনেক ডায়াবেটিস আক্রান্ত বাক্তি পাঁকা তালের রস অথবা এর শাঁস খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। এছাড়া মাটির নীচের সব্জি হিসেবে ওলকচুর প্রতিও রয়েছে যথেষ্ট খাদ্য ভীতি। কিন্তু এই ধরনের প্রচলিত ধারনার পক্ষে কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য পর্যন্ত পাওয়া যায় না। উল্লেখিত প্রচলিত ধারনার বাস্তবতা মূল্যায়নের নিমিত্তে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত ও পুষ্টি খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগে বিগত কয়েক বছরব্যাপি পরিচালিত গবেষণায় তাল এবং ওলকচু সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা পুরোটাই ভুল প্রমানিত হয়। পাঁকা তালের রস, কচি তালের শাঁস, অঙ্কুরিত তালের আটির ভেতরের সাদা অংশ অথবা ওলকচুয় প্রচুর পরিমানে পুষ্টিগুণ ও ফাইটোকেমিকেলে ভরপুর এবং এর কোনটিই ডায়াবেটিসের মাত্রাকে তো বাড়ায়ই না বরং উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে নিয়ে আসে। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি উল্লেখিত উপাদানগুলোর পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।


ইবি’র ফলিত ও পুষ্টি খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব শেখ শাহিনুর রহমান তার পিএইচডি গবেষণা প্রকল্পের অধীনে রূপান্তরীত ডায়াবেটিক ইঁদুরের উপর স্বল্পমাত্রায় উল্লেখিত তালের রস, কচি ও অঙ্কুরিত তালবীজের শাঁস এবং ওলকচু প্রয়োগ করে ইঁদুরের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সফল হন। বিশেষকরে কচি তালের শাঁস এবং পরিপক্ক তালের অঙ্কুরিত শাঁস ইঁদুরের ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ ও পরিপূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।

গবেষণা প্রকল্পটির কো-সুপারভাইজার এবং সুপারভাইজার হিসেবে ছিলেন, অত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ রেজাউল করিম ও অধ্যাপক ড. শেখ মোঃ আব্দুর রউফ।

অদূর ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি উদ্ভিতজাত উপাদানের সংমিশ্রণে একটি কার্যকর ডায়াবেটিস নিরাময়ে সক্ষম খাদ্য উপাদান তৈরির নিমিত্তে গবেষণা প্রকল্প চালিয়ে যাবেন বলে জানান ড. শেখ শাহিনুর রহমান। এজন্য একটি যুগোপযোগী এনিমাল হাউস ইতোমধ্যে ফলিত ও পুষ্টি খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগে স্থাপন করা হয়েছে বলেও জানা তিনি। উপযুক্ত ফান্ড পেলে গবেষণার মান এবং পরিধি বাড়ানো সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/মো. আমিনুর রহমান সোহাগ ও মো: রিপন হোসেন/পাটকেলঘাটা/সাতক্ষীরা



আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক