সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানি বন্দী প্রকাশিত: ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২০ | আপডেট: ১০:৩৯:পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২০ জলবদ্ধতায় ভুগছে সাতক্ষীরা পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকার মানুষ। পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতে ডুবে থাকে রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়িসহ ফসলী জমি। ভুক্তভোগীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রভাবশালীদের অবৈধ নেটপাটা দিয়ে মৎস্যঘের করার কারনে এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে অতি বৃষ্টির কারনে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে আরো ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সাতক্ষীরা বাসী’র অভিশাপ এখন জলবদ্ধতা। স্থানীয়রা জানায়,সাতক্ষীরার পৌরসভার মুনজিতপুর, রথখোলা,পূর্ব রাজার বাগান, ঢালী পাড়া, কুলিন পাড়া, বদ্দিপুর কলোনী, গদাইবিল, পুরাতন সাতক্ষীরা সরদারবাড়ি, মাদ্রাসা পাড়া, দাসপাড়া, ঋষিপাড়া,সরকারপাড়া, উত্তর কাটিয়া, কামালনগর, পলাশপোল, রসুলপুর, মধুমোল্লারডাঙ্গি, মেহেদিবাগসহ শহরের অধিকাংশ এলাকা গত কয়েকদিনের টানা বর্ষনে পানিতে তলিয়ে গেছে। সাতক্ষীরা শহরের বদ্দীপুর জনকল্যাণ সমিতির সভাপতি লুৎফর রহমান জানান,পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে এ সব এলাকার প্রায় ২০ হাজারের অধিক মানুষ। অনেকের বাড়ির উঠানে হাঁটু সমান পানি জমে গেছে। রাস্তার উপর ২/৩ ফুট পানি জমে জনসাধারনের চলাচল বিঘ্নত হচ্ছে। বাড়ি থেকে কাজের সন্ধানে পুরুষেরা পানি ঠেলে বাহিরে বের হলেও নারীরা বের হতে পারছেন না। তিনি আরও জানান,তলিয়ে আছে গেছে এসব এলাকার শত শত বিঘা ফসলি জমি, মৎস্যঘের ও রাস্তাঘাট। বিপাকে পড়েছেন প্রসূতি মায়েরা। জলাবদ্ধ এসব অঞ্চলে বর্তমানে নিরাপদ খাবার পানি সংকটের পাশাপাশি স্যানিটেশন ব্যবস্থা বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে পানিতে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবেশ দূষন শুরু হয়েছে। শহরের বদ্দীপুর জনকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন ও রবিউল ইসলাম, আব্দুর রহমানসহ অনেকেই জানান, অপরিকল্পিত বেঁড়িবাধ দিয়ে মৎস্য ঘের, পৌসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়া,নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়া ও সংযোগ খালগুলো যথাযথভাবে খনন না করা, খালের মধ্যে নেট পাটা দিয়ে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টিসহ বর্ষার পানি নদীতে না পড়তে পারাকেই দায়ী করেছেন নাগরিক সমাজের নেতারা। এদিকে, সাতক্ষীরা শহরের বদ্দীপুর এলাকার স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ত্রাণ দেওয়া নিয়ে মিথ্যাচারের প্রতিবাদে পৌর মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ঝাটা মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে এলাকাবাসী। সকাল ১১টায় পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বদ্দীপুর মোড়ে উক্ত ঝাটা মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় এলাকাবাসীরা এ সময় ঝাটা ও জুতা নিয়ে জলামগ্ন বদ্দীপুরের বিভিন্ন মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থ মেয়র ও কাউন্সিলরের পদত্যাগ দাবি করেন। সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম বলেন, বদ্দীপুর এলাকার বছরের প্রায় ৬ মাস পানিতে তলিয়ে থাকে। প্রতিবারই ভোটের আগ মুহুর্তে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু নির্বাচিত হলে পানি নিস্কাশনসহ বদ্দীপুর বাসীর উন্নয়নে কোন কাজ করেননা। প্রতি বছরই তাদের পানিতে ডুবতে হয়। এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তাদের অবগত করলে তারা পরিদর্শনেই সীমাবন্ধ রাখেন। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি আরও জানান,গত কয়েকদিন আগে পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতী, সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর সেলিমসহ পৌর কর্তৃপক্ষ বদ্দীপুর এলাকা পরিদর্শনে আসেন। সে সময় তারা মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে দুটি ট্রলি বরাদ্দ দেন। যাতে স্থানীয়রা ফ্রি যাতায়াত করতে পারবেন। অথচ এই ট্রলি দুটি সকালে একবার আসে এরপর আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায়না। হাফিজুর রহমান মাসুম আরও জানান,জলাবদ্ধ মানুষকে ১০ টাকা হারে ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এছাড়া এখানকার মানুষকে পর্যাপ্ত খাদ্য সহযোগিতায় দিয়েছেন বলেও পৌর মেয়র প্রচার দিয়েছেন। অথচ এখানে দুইজন ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ এখনও পর্যন্ত কোন খাদ্য সহযোগিতা পাননি। দ্রুত পানি নিস্কাশনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা বলে ঘোষণা দেন তারা। এদিকে সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতী বলেন,আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে খুব দ্রুত পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যাতে স্থানীয়রা ফ্রি যাতায়াত করতে পারবেন। বেতনা নদী খনন করা হলে সাতক্ষীরা শহরের স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভাব হবে। সংবাদটি ৬৪০ বার পড়া হয়েছে আপনার মতামত লিখুন : আরও পড়ুন নির্যাতিতদের নিয়ে সরকার গঠন হবে: তারেক রহমান সাতক্ষীরায় নববিবাহিত স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা, স্বামী আটক