শিশু মারিয়া খুঁজছে মা-বাবাকে, সে বোঝেনি বেঁচে নেই পরিবারের কেউ প্রকাশিত: ৭:৪৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০২০ | আপডেট: ৭:৪৩:অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০২০ সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ফোর মার্ডারে বেঁচে যাওয়া শিশু মারিয়া। একটি রুমের মধ্যে মা, এক ভাই ও এক বোনের গলাকাটা মরদেহ ছড়িয়ে রয়েছে। মায়ের পাশেই পড়ে কাঁদছিল ছয় মাস বয়সী শিশু মারিয়া সুলতানা। পাশের রুমে বাবার পা বাঁধা মরদেহ পড়ে রয়েছে খাটের উপরে। এভাবে নৃশংসভাবে গলাকেঁটে হত্যা করা হয়েছে একই পরিবারের চারজনকে। তবে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে রয়েছে শিশু মারিয়া। হয়তো খুনীরা শিশুটিকে হত্যা করেনি। মা, বাবা, ভাই, বোন যে পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই সেটি এখনো বোঝার বয়সও হয়নি মারিয়া সুলতানার। এখন কান্না থেমেছে মারিয়ার। খুঁজছে মা-বাবাকে। নির্দয় এ ঘটনাটি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামের। বৃহস্পতিবার ভোররাতে একই পরিবারের চারজনকে গলাকেঁটে হত্যা করা হয়। পুলিশ এখনো ঘটনার মোটিভ উৎঘাটন করতে পারেনি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন টিম মাঠে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান। দূর্বৃত্তের হাতে নিহত হয়েছেন হেলাতলা গ্রামের মাছের ঘের ব্যবসায়ী শাহীনুর রহমান (৪০), তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন(৩০), ছেলে সিয়াম হোসেন মাহী (৯) ও মেয়ে তাসমিন সুলতানা (৬)। মায়ের লাশের পাশেই পড়েছিল ছয় মাস বয়সী শিশু মারিয়া সুলতানা। স্থানীয়রা জানান, ওই বাড়িতে মা সহ ঘের ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান স্ত্রী ও তিন সন্তান কে নিয়ে বসবাস করত। পাশে ঘরে থাকত তার ভাই রায়হানুল। ঘটনার আগেরদিন তার মা আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। রাতে পাশের ঘরে ছিলেন ছোটভাই রায়হানুল। রাতের কোন এক সময় ঘুমন্ত অবস্থায় সন্ত্রাসীরা ঘেরব্যবসায়ী শাহিনুরসহ তার স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে জবাই করে হত্যা করে। ভাগ্যক্রমে বেচে যায় ছয় মাস বয়সী মারিয়া। মায়ের নিথর মৃতদেহের পাশে কাদছিলেন অবুঝ শিশু মারিয়া। পরিবারের স্বজনরা জানান, ভোরে তারা ওই বাড়ির চিৎকার চেচামেচি শুনে ছুটে যান। পরে দরজা খুলে দেখতে পান জবাই করা লাশগুলো ঘরের মধ্যে পড়ে আছে। এদিকে, সকালে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুন জীবিত থাকা একমাত্র শিশুটিকে নিয়ে নিজের কাছে রাখেন। পরবর্তীতে শোকে কাতর পরিবারের কাছে দেন শিশুটিকে। সকাল ১০টা পর্যন্ত লাশগুলো পড়েছিল ওই ঘরের মধ্যে। পুলিশের ক্রাইমটিমের তদন্তের জন্য ঘরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি কাউকে জানা গেছে, নিহত শাহীনুর রহমানের তিন ভাইয়ের এক ভাই আশরাফুল ইসলাম মালয়েশিয়া থাকেন। বোন আছিয়া খাতুন আহাজারি করছেন। হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, এটি একটি নৃশংস ঘটনা। একমাত্র শিশুকে রেখে পরিবারের বাকি চার সদস্যকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় যে বা যারাই জড়িত থাকুক তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টন্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। একই সঙ্গে উন্মোচন করা হোক ঘটনার মূল রহস্য। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাতে কলারোয়া থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে মামরা হয়েছে। তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার নিহত শাহিনুর রহমানের ভাই রায়হানুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।একই সাথে গোয়েন্দা পুলিশ, ডিএসবি, র্যাব ও অন্যান্য গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা সেখানে রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। তিনি বলেন, মায়ের লাশের পাশে পড়ে কাঁদছিল ছয় মাস বসয়ী শিশু মারিয়া। সকালে স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য তাকে তার দায়িত্বে রাখেন। এখনও মাঝে মধ্যে কাঁদছে। এদের আত্বীয়স্বজনের কাছে রয়েছে এই পরিবারের একমাত্র জীবিত থাকা শিশুটি। মা-বাবাকে খুঁজছে শিশু মেয়েটি। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার বলেন, এই নির্মম নৃশংস ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হবে। আমরা তথ্য উপাত্ত নিচ্ছি। ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তাদের খুঁজে বের করা হবে। পুলিশ মাঠে কাজ করছে। এমআর/ডেক্স সংবাদটি ১১৯৮ বার পড়া হয়েছে আপনার মতামত লিখুন : আরও পড়ুন কলারোয়া সীমান্ত থেকে ৫ বাংলাদেশী নাগরিক আটক কাকডাঙ্গা সীমান্তে আটক ৪