গ্রামের মেধাবী শামিম বিল্লাহ আবরার হত্যা মামলার আসামি: মানতে পারছেননা তার স্বজনরা

প্রকাশিত: ১০:৩১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৩, ২০১৯ | আপডেট: ১০:৩১:অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৩, ২০১৯

ডেক্স রিপোর্ট:
গ্রামের খুবই মেধাবী সরল সুবোধ বালকটিই যে বুয়েটের ‘আবরার হত্যা মামলার আসামি’ একথা ভাবতেই শিউরে উঠছেন সবাই। তারা বলছেন নিরীহ প্রকৃতির ওই ছেলে তো কোন দিন কোন দল করেনি। কোনো অসাধু সঙ্গেও দেখা যায়নি তাকে। ওদের পরিবারটিও নিরীহ প্রকৃতির। তাহলে কিভাবে সে এতোবড় একটি নৃশংস ঘটনায় জড়িয়ে পড়লো।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের ইছাকুড় গ্রামের ট্রাক চালক আমিনুর রহমান ওরফে বাবলু সরদারের ছেলে বুয়েটের নেভাল অ্যান্ড আর্কিটেকচার বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শামিমবিল্লাহ সম্পর্কে এসব কথা বলেন তার স্বজনসহ প্রতিবেশীরা। এর আগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল শুক্রবার বিকালে তাকে তার গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। সে আবরার হত্যা মামলার ১৪ নম্বর আসামি।

শামিমবিল্লাহ একজন হত্যাকারী হতে পারে এমন অভিযোগ মেনে নিতে পারছেন না তার প্রতিবেশীরা। শামিমবিল্লাহর বাবা বাবলু সরদার জানান, ২০১৫ সালে এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিল তার ছেলে। ২০১৭ সালে ঢাকার সেন্ট জোসেফস থেকেও গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিল সে। এর আগে অষ্টম শ্রেনিতে বৃত্তি লাভ এবং পঞ্চম শ্রেণি সমাপনীতেও সে সেরা ফলাফল করেছিল। তাকে লেখাপড়া করাতে তার কোনো টাকা খরচ হয়না জানিয়ে তিনি বলেন, তার ছেলে ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে গরিব ও মেধাবী হিসাবে আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে। ঢাকায় সে একজন সচিবের বাড়িতে টিউশনি পড়ায়। সেখান থেকে যে টাকা সে পায় তা নিজের খরচে লাগিয়েও বাড়িতে পাঠায়। এরই মধ্যে সে ল্যাপটপ, স্মার্টফোন সবই কিনেছে নিজের আয় করা টাকায়।

তিনি জানান, তার জমানো আড়াই লাখ টাকা দিয়ে সম্প্রতি সে একটি এফজেড মোটর সাইকেল কিনেছে। এর রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি জানান, আবরার ফাহাদ যেদিন খুন হন সেদিন রাত ৯ টার দিকে শামিমল্লিাহ প্রাইভেট পড়িয়ে একটি নতুন হেলমেট কিনে শেরে বাংলা হলে ঢুকছিল। সেখানে অনেকটা হাঙ্গামা দেখতে পায় সে। ওই মুহুর্তে তার বন্ধুরা তার হেলমেটেটি মাথায় পরে হাসি তামাসাও করে। তিনি জানান, এর কিছুক্ষণ পর হলের বড় ভাইরা ওদের সবাইকে ডাকে। এমন ১০/১৫ জনের মধ্যে শামিমবিল্লাহও একজন। বড় ভাইরা কি সব পরামর্শ নাকি দিয়েছিল তাদের। এরপর শামিম রুমে চলে যায়।

বাবলু সরদার ছেলের বরাত দিয়ে আরও জানান, আবরার হত্যার পরদিনও শামিম বিল্লাহ হলে ছিল। কিন্তু দারোয়ান তাকে ডেকে বলে বাবা তুমি তো পাশের রুমে থাকো। এখন এখানে থাকা নিরাপদ নয়। এরপর শামিম ওঠে একজন সচিবের বাসায়। সেখান থেকে সে সরাসরি গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায় চলে আসে। এর পর কোনো কিছু বুঝে উঠবার আগেই পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়।

শামিম বিল্লাহ’র মা হালিমা খাতুন জানান, আমার ছেলে কারও সাথে ঝগড়াও করেনি কোনোদিন। সবাই তাকে ভালো বলে। আমরা ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে আছি। কিন্তু এ কোন বিপদের মুখে পড়লো আমার সোনার ছেলেটি। শামিমবিল্লাহ’র একমাত্র বোন শারমিন শ্যামনগর আতরজান মহিলা কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
বাবা বাবলু সরদার জানান, আমি কিস্তিতে একটি ট্রাক কিনে সেটা চালাই। আমার ভাই লাভলু ঢাকা পরিবহনের চালক। আমার বাবা আতিয়ার রহমান একটি ইটভাটায় চাকুরি করেন। সব মিলে আমার পরিবার স্বচ্ছলতার মুখ দেখছিল। এর মধ্য দিয়ে ছেলেটি লেখাপড়া শিখে বড় হচ্ছিল। কিন্তু মাঝখানে এ কেমন যেন ছেদ পড়ে গেলো।
তিনি বলেন, একজন বাবা হিসাবে আমি চাই যারা আবরারকে হত্যা করেছে তারা যেনো শাস্তি পায়। এমনকি আমার ছেলে দোষী হলে সেও শাস্তি পাক। কিন্তু নিরীহ নিরপরাধ কোনো ছেলে যেনো কোনোভাবেই ষড়যন্ত্রের শিকার না হয়।

 

 

 

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/মো: র:/


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক