আশাশুনিতে নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে ৫০ গ্রাম প্লাবিত প্রকাশিত: ৫:১৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২২, ২০২০ | আপডেট: ৫:১৭:অপরাহ্ণ, আগস্ট ২২, ২০২০ ২১ টি গ্রাম নিয়ে প্রতাপনগর ইউনিয়নের গঠিত। ওই ইউনিয়নের ২১টি গ্রাম এখন পানিতে ভাসছে। এত পানি কোথা থেকে আসছে। বিগত ৪০ বছরে প্রতাপনগর ইউনিয়নের এভাবে তলিয়ে যেতে দেখিনি। এমন কোন বাড়ি নেই যে বাড়িতে বুক সমান পানি উঠছে না। কেউ মারা গেলে কবর দেওয়ারও জায়গা টুকু নাই-আমরা ৪০ হাজার মানুষ এখন কোথায় যাবো? এভাবে কি বেচে থাকা যায়-কন্না জড়িত কন্ঠে এভাবে বলছিলেন আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.আমজাদ হোসেন, স্থানয়ী ইউপি সদস্য কোহিনুর ইসলাম বাবু, মাসুম বিল্লাহ,ও কুড়িকাউনিয়া গ্রামের বৃদ্ধা আব্দুস সাত্তারসহ অনেকেই। তারা বলেন,প্রতিদিন বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে ইউনিয়নবাসীর দু:খ কষ্ট। বেলা ১১টার দিক থেকে শুরু হয় জোয়ার প্রবল বেগে হু হু করে ভাঙ্গা স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করে সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বিকাল ৫টার পরে ভাটার টানে কিছুটা পানি সরে গেলেও বসবাসের মত পরিবেশ নেই। চারিদিকে পানি আর পানি। কষ্টের যেন শেষ নেই মানুষের। সরকার দ্রুত বড় করে বেড়িবাঁধ দিয়ে আমাদের শেষ রক্ষা করে তাহলে আবারও ফিরতে পারবো স্বাভাবিক জীবনে। স্থানীয়রা জানান,গত কয়েক দিনে সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর একাধিক স্থানে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে কমপক্ষে ২৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে । এতে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা এবং শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। এতে জোয়ার-ভাটা বইছে লোকালয়ে। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে সুপেয় খাবার পানির অভাব। আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল জানান, তার গোটা ইউনিয়ন এখন পানিতে নিমজ্জিত। সাধারণ মানুষ বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়োরম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, প্রতাপনগর ইউনিয়নের ২১টি গ্রামের মধ্যে ২১টি গ্রামই সম্পূর্ণ তলিয়ে রয়েছে। তিনি জানান,পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন বরাদ্দ থাকার পরও যথা সময়ে কাজ না করায় এলাকা বারবার ভাঙছে। কেউ মারা গেলে তার কপালে কবরের মাটিও জুটছে না। এ ভাবে সকাল ও রাত্র পার করছেন তার ইউনিয়ানবাসি। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউপি পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান,তার ইউনিয়নের নেবুবুনিয়া, গাবুরা ও খলিসাখালী এখনও প্লাবিত। এছাড়া মল্ল্কিবাড়ি, গাজিবাড়ি ও মেইন ক্লোজারের পাশে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। তিনি আরও জানান,গাবুরার হাজার হাজার মানুষকে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে কোনো রকমে ৬টি পয়েন্টে রিং বাঁধ দিয়ে পানিবন্ধ করা সম্ভব হলেও নতুন করে ৭টি পয়েন্ট ভেঙেছে। তবে, পরবর্তী জোয়ারে কি হবে তা বলা যাচ্ছে না। আশাশুনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম জানান, বর্তমানে তার উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। টেকসইভাবে বাঁধ নির্মাণ ছাড়া রক্ষার বিকল্প নেই। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশ কুমার সরকার জানান, কয়েকটি স্থানে রিংবাধ দিয়ে পানিবন্ধ করা হয়েছে। তবে, প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা ও কুড়িকাউনিয়া এবং শ্রীউলা ইউনয়নের হাজরাখালী পয়েন্টে বেঁড়িবাধ ভেঙে এতই গভীর হয়েছে যে সেখানে এখন বেঁড়িবাধ সংস্কার করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশ কুমার সরকার তিনি আরও জানান, বেড়িবাঁধ দেওয়ার চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান,জেলার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় ৪০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সার্বিক বিষয় ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। যেসমস্থ লোকজন অতি সংকটে রয়েছে তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য ইউএনওদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংবাদটি ৬৮১ বার পড়া হয়েছে আপনার মতামত লিখুন : আরও পড়ুন আশাশুনিতে এক গৃহবধুকে গলা কেটে হত্যা করেছে দূর্বৃত্তরা আশাশুনিতে নির্মানাধীন ব্রীজ থেকে পড়ে নিহত ২, আহত ১